জ্বালানি আমদানির চাপ কমাবে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নে সঠিক উদ্যোগ ও কৌশলগ্রহণ প্রয়োজন। এতে উচ্চমূল্যে জ্বালানি আমদানির চাপ কমবে। একই সঙ্গে সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রার।

শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ‘ইনশিওরিং আরইইই ফর এ সাসটেইনেবল ফিউচার: রোল অব স্রেডা অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টনার্স’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। জ্বালানি বিষয়ক ম্যাগাজিন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার এ সভার আয়োজন করে।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (স্রেডা) উদ্দেশ করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্রেডাকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নে একটি ওয়ান স্টপ সেন্টার চালু করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নে সৃষ্ট সব সমস্যা মোকাবিলায় উদ্যোগ নিতে হবে স্রেডাকে। শুল্ক বৈষম্যের কারণেও সোলার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন বক্তারা। এটা যৌক্তিকভাবে অপসারণ করা হলে সোলার থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম আরও কমানো সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, অস্থির বিশ্ব জ্বালানি বাজারের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আমদানি ব্যয় এখন বড় দায় হয়ে দেখা দিয়েছে। সোলার, বায়ু বিদ্যুৎসহ সব নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার সঠিক কৌশল নিতে হবে। অকৃষি জমি সরকার অধিগ্রহণ করে তা উন্নয়ন ও সঞ্চালন সুবিধা নিশ্চিত করে বেসরকারি খাত থেকে প্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৪-৫ সেন্টে সোলার বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, যেখানে চ্যালেঞ্জ বেশি, সেখানে প্রাপ্তিও বেশি। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সাফল্য পেতে চ্যালেঞ্জ বেশি। এখানে সাফল্য পেলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় সম্ভব। জ্বালানি কেনা খাত থেকে যদি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যায়, তা দেশের অন্যান্য খাতের উন্নয়নে কাজে লাগবে।

জ্বালানিতে সোলার নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশে বিশাল চর পড়ে আছে। সেখানে সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এখান থেকে ৪-৫ সেন্টে বিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে। বিভাগীয় শহরের সরকারি ভবনগুলোর ছাদে সোলার স্থাপন করা যায়, রেললাইনের ওপর সোলার বসানো যায়, সড়কের দুই পাশেও সোলার প্যানেল স্থান করা যায়। অনেক বাঁধ রয়েছে, সেখানেও সোলার বসানো যায়।

কাপ্তাই লেকে ভাসমান সোলার প্যানেল স্থাপন করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ লেকের এক শতাংশ জায়গা জুড়ে সোলার বসিয়ে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

স্রেডা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, সোলার হোম নিয়ে আমাদের সাফল্য অনেক। তবে বহুল জনসংখ্যার দেশে জমি স্বল্পতা বড় সমস্যা। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বিজনেস মডেল প্রয়োজন। সোলার ইরিগেশনে বিজনেস মডেল তৈরি জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ সেচের জন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় মাত্র চার মাস, কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১২ মাস। সেক্ষেত্রে বাকি সময়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রিডে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। বায়ু এনার্জি আইপিতে ২৪৫ মেগাওয়াট এবং সিরাজগঞ্জে সরকারিভাবে ১১০ মেগাওয়াট উৎপাদনের কাজ চলছে। কোস্টাল এলাকায় বায়ু এনার্জির সম্ভাবনা নিয়ে ডাটা সংগ্রহের কাজ চলছে। বঙ্গোপসাগরে বায়ু এনার্জি কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে স্রেডা কাজ করছে বলে জানান তিনি।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের স্টোরেজ নিয়ে স্রেডাকে কাজ করতে হবে। এখাতে পলিসি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সুযোগ রয়েছে। ২০১০-১৫ সাল ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সুসময়, ২০১৫-২০২০ সালে আমরা জোর দিয়েছি সঞ্চালন-বিতরণের দিকে। আর ২০২১-২০২৫ সালে আমাদের সাসটেইনেবল এনার্জির দিকে নজর দিতে হবে। স্রেডা এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা নিতে পারে।

বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে যদি বিদ্যুতের দাম বেড়ে যায়, তবে ১০০ ভাগ বিদ্যুতায়নের সুফল পাওয়া যাবে না। এজন্য নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে হবে। নেট মিটারিংয়ে সুফল পেতে হলে ট্যাক্স নিয়ে ভাবতে হবে। এখন ৩৭ শতাংশ ট্যাক্স ধরা আছে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের জন্য জরুরি প্রয়োজন মেটাতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের আওতায় টাস্ক ফোর্স গঠন করা যেতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী আল মুদাব্বির বিন আনাম বলেন, উন্নত কারিগরি দক্ষতা আমরা কীভাবে ব্যবহার করতে পারি তা নিয়ে কাজ করতে হবে। এছাড়া কারিগরি দক্ষতা ডাইভারসিফিকেশন জরুরি। সাসটেইনেবল এনার্জি খাতে কাজ শুরু করতে আমরা মোটেই দেরি করিনি। এনার্জির উৎপাদন, ব্যবহার এবং এর ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট করতে এখাতের সবার চাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্রেডাকে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে এখাতে সাফল্য পেতে মোটেই বেগ পেতে হবে না।

জুলস পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূহের আল খান বলেন, সোলার বিদ্যুৎ নিয়ে যে নীতিমালা আছে তা বেশ ভালো। তবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আরইবিতে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। স্রেডাকে যদি জ্বালানির ওয়ান স্টপ সেন্টার করা যায় তাহলে অনেক বাধা থেকে মুক্ত হওয়া যায়, সময়ও সাশ্রয় হয়। অনেক ক্ষেত্রে কাস্টমকে বোঝান যায় না, এর সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। বায়ু এনার্জিতে ব্যক্তিখাত সংশ্লিষ্ট করা দরকার।